হতাশা থেকে মুক্তির ৭ টি উপায়

আমরা সবাই চাই আমাদের ছোট-বড় ইচ্ছেগুলো পূর্ণতা পাক।যদি কোন কারণে ইচ্ছেগুলো পূরণ না হয়- আমাদের মনে এক অবসাদ বাসা বাঁধে।
মনের এই অবসাদই মূলত হতাশা।এই হতাশার কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়।


জীবনে সাবলীলভাবে এগিয়ে যেতে আমাদের হতাশামুক্ত থাকা জরুরী। 
চলুন, আর দেরি না করে হতাশা থেকে মুক্তির কার্যকরী উপায়গুলো জেনে নিই।

সূচিপত্রঃ হতাশা থেকে মুক্তির ৭ টি উপায়

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা

আমরা যে ধর্মের অনুসারীই হই না কেন,প্রতিটি ধর্মই শান্তির বার্তা দেয়।
ইসলাম ধর্মে হতাশা থেকে মুক্তি পেতে বেশ কিছু উপায় উল্লেখ রয়েছে।যেমন-নিয়মিত নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা,দোয়া-জিকির করা,বেশি বেশি তওবা করা ইত্যাদি।

আমরা নিয়মিত নামাজ আদায় করলে জীবন একটা রুটিনে আবদ্ধ হয়,এতে বিভিন্ন খারাপ চিন্তা মাথায় আসতে পারেনা।
কুরআন তিলাওয়াত করলে আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার বিধান,সঠিক জীবনাদর্শ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারি।
এছাড়া জিকির এবং তওবার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের মাধ্যমে আমরা হতাশা থেকে মুক্তি পেতে পারি।

প্রত্যাশা কম করা

আমাদের জীবনে চলার পথে বিভিন্ন মানুষের সাথে আমরা মিশি,বিভিন্ন সম্পর্কে আবদ্ধ হই।বিভিন্ন সম্পর্কের মানুষগুলোর কাছে আমাদের নানানরকম চাওয়া-পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। চাওয়ার সাথে পাওয়ার যে অসমতা তৈরি হয়,সেখান থেকেই মূলত আমাদের জীবনে হতাশা বাসা বাঁধে।
এছাড়া আমরা কখনই অল্পতে সন্তুষ্ট হই না।জীবনে যেটুকু পেলেই আমাদের চলে ,তার চেয়ে বহুগুন আমরা পেতে চাই।এভাবেই আমাদের জীবন হতাশায় ছেয়ে যায়।

তাই হতাশা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের অবশ্যই অতিরিক্ত প্রত্যাশা ত্যাগ করতে হবে।আমরা আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশা কমিয়ে আনতে পারলে একদিকে যেমন হতাশা মুক্ত জীবন পাবো,অপরদিকে সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারবো।

চলমান জীবন থেকে একটু বিরতি নেয়া

মাঝে মাঝে পারিপার্শ্বিক জটিলতায় জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে।প্রতিটি কাজে বিতৃষ্ণা জন্ম নেয়।ইচ্ছে করে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে যেদিকে দু'চোখ যায় চলে যাই;কিন্তু বিভিন্ন দায়িত্ব-কর্তব্য,নানাবিধ সমস্যা আমাদের আটকে রাখে।চাইলেই যেখানে ইচ্ছা চলে যাওয়া যায় না।শত হতাশা,মানসিক চাপ নিয়েই আমরা আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যাই।

আমাদের মনের মধ্যে জেগে উঠা এই গুপ্ত ইচ্ছা, সবকিছু ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা, সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা-এসবের মাঝেই হতাশা থেকে মুক্তির উপায় নিহিত রয়েছে। আমরা পুরোপুরি চলমান জীবন থেকে মুক্তি পেতে পারিনা বা উচিত নয়।তাই আমাদের উচিত কিছুদিনের জন্য জীবনের চলমান কার্যক্রম স্থগিত করা। দূরে কোথাও না হোক;বাড়ি থেকে অন্তত কিছুটা দূরে,প্রকৃতির খুব কাছাকাছি আমাদের যাওয়া উচিত।কয়েকটা দিন প্রকৃতির সাথে নিবিড় একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। হতাশা থেকে মুক্তি পেতে প্রকৃতির এই সান্নিধ্য বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

'না' বলতে শেখা

আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছে যারা কাউকে না বলতে পারিনা।এমন ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি হতাশায় ভোগে।'না' বলতে না পারার কারণে আমরা অনেক সময় আমাদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি,এতে একগাদা মানসিক চাপ মস্তিষ্কে ভর করে।অথচ সামান্য একটা 'না' শব্দ আমাদের এই চাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে।

জীবনে চাপমুক্ত থাকতে,হতাশামুক্ত থাকতে 'না' বলতে শেখা খুব জরুরী।আমরা অনেক সময় নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে অন্যের কাজে সহযোগিতা করি;শুধুমাত্র 'না' বলতে পারি না বলে। এই জড়তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আমরা কখনোই আমাদের জীবনে সফল হতে পারবো না,পারবো না সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে,পারবো না হাসিখুশি ভাবে আমাদের কাজগুলো করতে,পারবো না চাপমুক্ত থাকতে।

আমরা মানুষকে সহযোগিতা করবো,কাছের মানুষদের আবদার পূরণ করবো,মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করবো-তবে সেটা সাধ্যের বাইরে না গিয়ে।যখনই দেখবো আমাদের কোন কাজ সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে বা সে কাজ করতে গিয়ে নিজের কাজে ক্ষতি সাধন হচ্ছে তখনই আমরা 'না' বলবো।তাহলে আমরা হতাশা থেকে মুক্তি পাবো।

ভার্চুয়াল জগত থেকে বিরতি নেওয়া

বর্তমান সময়ে আমরা বাস্তব জীবন থেকে অনেক দূরে সরে গেছি। আমরা বেশি সময় কাটাই ভার্চুয়াল জগতে।ভার্চুয়াল জগতটাই আমাদের কাছে এখন বাস্তব মনে হয়।বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা নষ্ট করি অনেকটা সময়। নিজের অজান্তেই আমরা আসক্ত হয়ে পড়ছি এক অজানা নেশায়।ভার্চুয়াল বন্ধু-বান্ধব,শুভাকাঙ্ক্ষী,ফ্যান- ফলোয়ার এগুলোকে বাস্তব মনে হয়।কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারি-এগুলো বড্ড অবাস্তব;বড্ড সময়ের অপচয়।

মানুষের সফলতা-ব্যর্থতা,ক্রাইম,সামাজিক জটিলতা,অস্থিরতা এসব কিছু প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে আমরা নিজের অজান্তেই হতাশায় নিমজ্জিত হই।অথচ এ ভার্চুয়াল জগতটা আমাদের খুব একটা কাজে লাগে না।আমরা চাইলেই এই জগত থেকে দূরে থাকতে পারি।হ্যাঁ,যোগাযোগ রক্ষার্থে আমরা ডিজিটাল ডিভাইস গুলো ব্যবহার করবো,তবে তা যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত না হয়ে যায়।অতিরিক্ত কোন কিছুই জীবনে ভালো প্রভাব ফেলতে পারে না।হতাশা থেকে মুক্তি পেতে এই ভার্চুয়াল জগত থেকে আমরা কিছুদিনের জন্য বিরতি নিতে পারি।

পছন্দের মানুষগুলোর সাথে কথা বলা

আমাদের জীবনে বেশ কিছু মানুষ থাকে যাদের আমরা পছন্দ করি, যাদের সান্নিধ্য আমাদের ভালো লাগে,যাদের সাথে কথা বললে চাপমুক্ত মনে হয়। এমন মানুষদের সাথে কথা বললে হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।সাধারণত এই মানুষগুলো আমাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলেই আমরা মানুষগুলোকে পছন্দ করি।কিন্তু দেখা যায় বিভিন্ন কর্মব্যস্ততায় এই পছন্দের মানুষগুলোর সাথে আমাদের তেমন একটা কথা বলা হয়ে উঠেনা।

তাই যখন প্রচন্ড মানসিক চাপ অনুভব করি,হতাশায় নিমজ্জিত থাকি-ঠিক তখনই এই মানুষগুলোর সাথে আমাদের কথা বলা উচিত, তাদের সাথে কিছুটা সময় একান্তে কাটানো উচিত, এতে করে আমরা হতাশা থেকে মুক্তি পাবো।

শরীরচর্চায় মনোনিবেশ করা

বিভিন্ন কর্মব্যস্ততায় আমরা শরীর চর্চা করার সময় পাইনা।শরীরচর্চা বা ব্যায়াম মানসিক এবং শারীরিকভাবে আমাদের প্রফুল্ল রাখে।বিভিন্ন ধরনের শরীরচর্চা আমরা করতে পারি।যেমন-সাইক্লিং,ইয়োগা, মেডিটেশন,জগিং ইত্যাদি।এছাড়া যদি সম্ভব হয়,আমরা জিমে গিয়ে ট্রেইনারের তত্ত্বাবধানে শরীরচর্চা করতে পারি।কথায় আছে,"সুস্থ দেহে সুন্দর মন,শান্তিময় এ জীবন।"

শরীরচর্চার মাধ্যমে আমরা অহেতুক দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারি।এটি মানসিক চাপ এবং হতাশা থেকে মুক্তির একটি অন্যতম উপায়।

শেষ কথা

Life Is Not A Bed Of Roses Nor A Bed Of Thorns. Life Is What You Make It. এই প্রবাদটি আমাদের জীবনে ধ্রুবতারার মত সত্য।জীবনে সুখ-দুঃখ, মানসিক অবসাদ,হতাশা,পাওয়া,না পাওয়া থাকবেই।এই সবকিছু নিয়েই আমাদের জীবন।

জীবনে হতাশা থাকবেই,আমাদের নিজেদেরই হতাশা থেকে মুক্তির উপায় বের করতে হবে।একেকজনের জন্য একেক পদ্ধতি কাজে আসতে পারে,কোন পদ্ধতি আমাদের হতাশা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে তা আমাদেরই খুঁজে নিতে হবে।সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন এই কামনা করি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url