নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায়
আপনি কি জানেন নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায়? যদি না জেনে থাকেন নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায়, তাহলে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব, নাকের পলিপাস কি? নাকের পলিপাস কেন হয় ও নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায়
ভূমিকা
আমাদের মধ্যে অনেকের নাকে পলিপ বা পলিপাসের সমস্যা হয়ে থাকে। তবে অনেকেই নাকের পলিপাস কি? নাকের পলিপাস কেন হয় এবং নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায় সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না। আর তাই কোনটি পলিপ বা পলিপাস আর কোনটি ইনফেরিয়র টারবিটেন, সেটি সঠিকভাবে বুঝতে পারেনা। আজকের পুরো পোস্টে আপনাদেরকে বিস্তারিতভাবে জানাব, নাকের পলিপাস কি? নাকের পলিপাস কেন হয় এবং নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায় সে সম্পর্কে।
নাকের পলিপাস কি?
অনেক সময় রোগীরা নাকের ভেতর মাংস ফুলে যাওয়াকে পলিপ বা পলিপাস বলে থাকেন। কিন্তু আসলে নাকের ভেতর মাংস ফুলে যাওয়াকে মেডিকেলের ভাষায় ইনফেরিয়র টারবিনেট বলা হয়। পলিপ বা পলিপাস সাধারণত সাইনাস থেকে তৈরি হয়। আবার কখনো ম্যাক্সিলারি সাইনাস থেকেও পলিপাস বা পলিপ তৈরি হয়। অনেক সময় সঠিকভাবে নাক পরিষ্কার না করার কারণে, নাকের মধ্যে ফাঙ্গাস ইনফেকশন দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ ১২ রবিউল আউয়াল ২০২৩ কবে পালিত হবে
নাকের এই ফাংগাল ইনফেকশন থেকে, নাকের উভয় পাশে একাধিক সাইনাস পলিপ বা পলিপাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এ পলিপগুলো প্রাথমিক অবস্থায় সাইনাসের ভেতর থাকে। এটি আস্তে আস্তে একসময় বাড়তে থাকে, তখন সাইনাস থেকে নাকের ভেতর চলে আসে। এবং এটি আমরা খালি চোখে দেখতে পাই, এটিকেই নাকের পলিপ বা পলিপাস বলে। এই পলিপগুলো আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং এটি খালি চোখে দেখতে অনেকটা সাদা আঙ্গুরের থোকার মত মনে হয়।
নাকের পলিপাস কেন হয়
বিভিন্ন রকম কারণে নাকের পলিপাস হয়ে থাকে, তবে নাকের পলিপাস হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এলার্জিজনিত সমস্যা। এ এলার্জি নাকের ভেতরে, ধুলাবালি ময়লা ইত্যাদি থেকে হতে পারে। পলিপাস বা পলিপ সাধারণত সাইনাস থেকে তৈরি হয়। আর নাকের ভেতরে ফাংগাল ইনফেকশনের এলার্জি থেকে, কিছু কিছু মানুষের নাকের উভয় পাশে একাধিক পলিপাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। নাকের পলিপাস সমস্যাটি সবথেকে বেশি হাঁপানি রোগীদের হয়ে থাকে।
এর কারণ হল হাঁপানি রোগীদের ধুলাবালিতে প্রচুর পরিমাণে এলার্জি থাকে। তাদের ক্ষেত্রে সামান্য একটু ধুলাবালি তারা সহ্য করতে পারে না, হাঁপানি সমস্যা শুরু হয়ে যায়। আর তাই আগেই বলেছি পলিপাস হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এলার্জি। অতএব যে সমস্ত রোগীদের হাঁপানি রয়েছে তাদের পলিপ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সাধারণত নাকের এলার্জি থেকে ফুসফুসে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। যে সমস্ত ব্যক্তির নাকের এলার্জি সমস্যা আছে, তারা সময় মত এলার্জি সমস্যা কন্ট্রোল না করতে পারলে হাঁপানি সমস্যা বেড়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ মাহে রবিউল আউয়ালের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য
ঠিক তেমনভাবে, ফুসফুসের এলার্জি বা হাঁপানি সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া নাকের উপরে এসে পড়ে। নাকে পলিপাসের সমস্যা যখন হয় তখন, হাঁচি, সর্দি, নাক থেকে পানি পড়ে এর ফলে নাক বন্ধ হয়ে আসে। আর এ কারণে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে অসুবিধা বোধ হয়। যখন নাকে সংক্রমণ হয় তখনই নাক দিয়ে সর্দি ঝরে। এভাবে দীর্ঘদিন নাক দিয়ে সর্দি পড়ার কারণে, নাকের মধ্যে পুজ তৈরি হওয়া শুরু হয়। এবং এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে স্থায়ীভাবে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায়
নাকের পলিপাস বা পলিপ সাধারণত এলার্জির কারণে হয়ে থাকে। তবে সচারাচর আমরা যেটিকে পলিপাস বা পলিপ বলে চিনি সেটি আসলে পলিপাস বা পলিপ নয়। এটিকে বলা হয় ইনফেরিয়র টারবিনেট। আজকে আমরা জানব নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায় তার নিয়ম গুলো সম্পর্কে। চলুন তাহলে ধাপে ধাপে জেনে নেই নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায়।
নাক দিয়ে সর্দি ঝরাঃ প্রাথমিক অবস্থায় রোগীদের সাধারণত নাক দিয়ে সর্দি ঝরে, অনেকটা নাক বন্ধ হয়ে আসে। যখন সর্দি ঝরে এমন অবস্থায় কখনো সর্দি সামনের দিকে ঝরে, আবার কখনো পেছনদিকে চলে যায় সে সময় ঢোক গেলার মত প্রবণতা সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত সর্দি ঝরার কারণে প্রথম অবস্থায় এক নাক বন্ধ হয়ে আসে, কিছু সময় পরে আরেক নাক ও বন্ধ হতে থাকে। এভাবে যত সময় বাড়তে থাকে ততই ধীরে ধীরে উভয় নাগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে আংশিকভাবে নাক বন্ধ হয় পরে সম্পূর্ণভাবে নাক বন্ধ হয়ে যায়।
ধুলাবালির সমস্যাঃ নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায়, এ সময় রোগীদের সামান্য ধুলাবালি ছোঁয়া লাগলে প্রচন্ড পরিমাণে হাঁচি হতে থাকে। আবার সামান্য ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না, যেমন- রান্নার ধোয়া, সিগারেটের ধোঁয়া, গাড়ির ধোয়া, ইত্যাদি। এমন ধোয়া হলে তাদের দম বন্ধ হয়ে আসে।
মাথাব্যথা সমস্যাঃ যেসব ব্যক্তির নাকে পলিপের সমস্যা দেখা দেয়, তাদের সাধারণত মাথাব্যথা সমস্যা হয়। তবে পলিপ যখন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তখনই মাথাব্যথা সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পলিপ যখন বড় আকার ধারণ করে, তখন ধীরে ধীরে মাথা ব্যথা কমে যায়।
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়াঃ যখন নাকে পলিপের সমস্যা শুরু হয়, তখন নাক দিয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি পড়তে থাকে। এ সময় ধীরে ধীরে এক নাক থেকে, আরেক নাক বন্ধ হতে থাকে। আর তখনই নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা যায়। নাক দিয়ে নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়, ঠিকভাবে নিশ্বাস নেওয়া যায় না মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসে।
পলিপ দেখতে যেমন হবেঃ নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায়, প্রাথমিক অবস্থায় পলিপ খালি চোখে দেখা যায় না। তবে এটি যত বড় হতে থাকে ততই খালি চোখে দেখা যায়। পলিপ সাধারণত অনেকটা সাদা আঙ্গুর ফলের মত হয়ে থাকে, যেটি থোকায় থোকায় দেখা যায়।
নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায়ঃ পরিশেষে
নাকের পলিপাস বা পলিপ বিভিন্ন রকম কারণে হয়ে থাকে। তবে সবথেকে বেশি হয় নাকে এলার্জি থাকলে এবং সেই সাথে হাঁপানি রোগীদের নাকের পলিপ পাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
আরো পড়ুনঃ ১২ রবিউল আওয়াল ২০২৩ স্ট্যাটাস
আজকের আর্টিকেলে আপনাদেরকে জানিয়েছি নাকের পলিপাস কি? নাকের পলিপাস কেন হয়, নাকের পলিপাস বা পলিপ কিভাবে শনাক্ত করা যায় তা বিস্তারিতভাবে। এ বিষয়ে আপনাদের আরো কোন তথ্য জানার প্রয়োজন হলে, মন্তব্য করতে পারেন ধন্যবাদ। ২৫২৪২
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url