হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি

হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি ও মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি ও ফলন বৃদ্ধির উপায় যদি আপনি জানতে চান তাহলে পোস্টটি আপনার জন্য। আজ আমি হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। তাহলে আপনি যদি হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি ও মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি ও ফলন বৃদ্ধির উপায় জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

মিষ্টি কুমড়া প্রায় 3½ মাসে পরিপক্ক হয়। এটি ভিটামিন এ এবং পটাশিয়ামের ভালো উৎস। কুমড়া চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, রক্তচাপ কমায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর পাতা, কচি ডালপালা, ফলের রস ও ফুলে ঔষধি গুণ রয়েছে। কিন্তু আমাদের জানার বিষয় হল হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি।

সূচিপত্রঃ হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি

কুমড়া চাষে মাটি এবং জলবায়ু

কুমড়া এমন মাটিতে সবচেয়ে ভালো জন্মে যেখানে পানি ভালোভাবে আঁটকে থাকে এবং বাতাস ও পানি ভালোভাবে চলাচল করতে পারে। আর হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতিতে মাটির পিএইচ মান 5.8 - 6.6 হওয়া উচিত। হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতিতে ঠান্ডা তাপমাত্রা খুব একটা ভালো না এবং হালকা তুষারপাত ফসলকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করতে পারে। কুমড়া উৎপাদনের জন্য সর্বোত্তম গড় তাপমাত্রা 18°C থেকে 35°C এর মধ্যে থাকা ভালো। 

35 ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে বা 10 ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রাতে কুমড়া গাছ বৃদ্ধি কমে যায় এবং কুমড়া পাকতে দেরি হয় বা সময় নেয়। যাইহোক, কুমড়া গাছ বৃদ্ধির সময় যে কোনো সময় অতিরিক্ত পানি দেওয়ার ফলে ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে ফল পরিপক্ক হওয়ার সময়, ফল ফেটে যেতে পারে, যা ফসলের ফলন এবং ফলের গুণমান হ্রাস করতে পারে।

হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতিতে জমি তৈরি

মাটির বায়ুচলাচল বাড়াতে কমপক্ষে 20 সেমি গভীর করে জমি চাষ করুন। ভালোভাবে জমির মাটি ভুরভুরে করার জন্য প্রথম দিকে 2-3 বার লাঙ্গল এবং পরে হ্যারো মেশিন দিয়ে জমি চাষ করুন। কুমড়া বীজ মাটিতে লাগানোর কয়েক সপ্তাহ আগে জমি এবাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে যদি চাষের জমি ভালো না হয় মানে মাটি যদি ঠিক ভাবে প্রস্তুত করা না হয় তাহলে ফসল ভালো হবে না।

আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ই এর ০৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা - ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার

বীজ রোপণঃ হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতিতে সরাসরি জমিতে রোপণ করা বীজ থেকে কুমড়া জন্মে। জমিতে সারি করে আইল দিয়ে নিতে হবে। একটা করে আইলে 3-4টি বীজ রোপণ করুন এবং 2.5 সেমি গভীর করে বীজ গুলো রোপণ করতে হবে। সারির সাথে আইল থেকে আইলের ব্যবধান ৩ ফুট থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং সারির মধ্যে দূরত্ব ৬ ফুট থেকে ৯ ফুট হতে পারে। আপনার যেভাবে ভালো লাগে সেভাবে দিতে পারেন।

জমিতে সেচ পদ্ধতি

আপনি যখন হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ করবেন তখন যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য খরা থাকে তাহলে কুমড়া আঘাত পেতে পারে। প্রয়োজনে সেচের মাধ্যমে জমিতে পানি দিতে হবে। গাছ বাড়ার সময় ঘন ঘন হালকা সেচ ৫-৬ বার দিলে উপকার পাওয়া যায়। গাছ লাগানোর প্রথম দিকে, অল্প পরিমাণে সেচ দিন কারণ অত্যধিক বা খুব বেশি পানি শিকড়ের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে ফলে গাছ তাড়াতারড়ি বাড়তে পারেনা। সেচ অনিয়মিত হলে ফল ফেটে যাওয়ার বা পচে যাওয়ার সম্ভাবণা থাকে প্রচুর পরিমানে।

জমিতে যেভাবে সার প্রয়োগ করবেন

মিষ্টি কুমড়া চাষে জমিতে সার হিসেবে, বেসাল ডোজ 8-12 টন এফওয়াইএম, ইকোহিউম গ্রানুলস 5-10 কেজি এবং সাধারণ সার যার মধ্যে রয়েছে নাইট্রোজেনঃ 55 কেজি (N), ফসফরাস 35 কেজি (P2O5) এবং পটাসিয়াম 55 কেজি (K2O) এবং এর প্রধান পুষ্টি ক্যালসিয়াম ব্যবহার করা যেতে পারে। নাইট্রেট 10 কেজি প্রতি একর এবং ম্যাগনেসিয়াম সালফেট 25 কেজি প্রতি একর এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট মিশ্রণ যাতে জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, বোরন, আয়রন, কপার এবং মলিবডেনাম রয়েছে। যা জমিতে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুনঃ মে মাসের সবজি চাষ ২০২৩ - মে মাসের সবজি চাষ পদ্ধতি

গাছে হলুদের লক্ষণ দেখা দিলে নাইট্রোজেন সার এবং ম্যাগনেসিয়াম সালফেটের সাইড প্রয়োগ করুন। এর ফলে ফলগুলি বড়, সবুজ বা গভীর সবুজ হতে পারে। হাইব্রিড জাতগুলি অনেক বড় ফল দেয়, আকৃতি গোলাকার থেকে আয়তাকার পর্যন্ত হতে পারে। আর হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া ফলন ও দেশি থেকে অনেক বেশি হয়।

 আগাছা ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ

আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে, ঘন ঘন আগাছা পরিষ্কার করুন বা কেটে ফেলুন। আগাছা দমন করা হয় কোদালের সাহায্যে বা হাত দিয়ে। বীজ বপনের ২-৩ সপ্তাহ পর প্রথম আগাছা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। জমুকে আগাছামুক্ত করতে বা রাখতে গাছ লাগানো থেকে শুরু করে ফল তোলা পর্যন্ত মোট ৩-৪ বার আগাছা পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয়।

কীটপতঙ্গঃ কুমড়া গাছে বিশেষ করে এফিডস এবং থ্রিপস নামের কীটপতঙ্গ এর আক্রমণ বেশি দেখা যায়। এরা পাতার রস চুষে নেয় যার ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং ঝরে যায়। থ্রিপসের ফলে পাতা কুঁচকে যায়, পাতা কাপের আকারে বা উপরের দিকে বাঁকা হয়ে যায়। জমিতে এসব কীটপতঙ্গ এর উপদ্রব দেখা গেলে থায়ামেথক্সাম @ 5 গ্রাম/15 লিটার পানিতে মিশিয়ে ফসলে স্প্রে করুন।

মিষ্টি কুমড়া গাছের রোগ এবং নিয়ন্ত্রণ

পাউডারি মিলডিউঃ এই রোগে সংক্রামিত গাছের প্রধান কান্ডে ও পাতার উপরের পৃষ্ঠে প্যাঁচা, সাদা পাউডারের মত দেখা যায়। এটি একটি পরজীবী ছত্রাক উদ্ভিদকে খাদ্য উৎস হিসেবে ব্যবহার করে। এই রোগের মারাত্মক আক্রমণে গাছ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং অকালে ফল পাকে যা পুষ্ট হয় না। যদি এই রোগের উপদ্রব দেখা যায় তবে 10 দিনে 2-3 বার পানিতে দ্রবণীয় সালফার @ 20 গ্রাম/10 লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করুন।

ডাউনি মিলডিউঃ এই রোগ সিউডোপারনোস্পোরা কিউবেনসিস দ্বারা সৃষ্ট হয়। রোগের উপসর্গগুলি হল পাতার নীচের অংশে বেগুনি রঙের দাগ থোকায় থোকায়  দেখা যায়। এই রোগ থেকে গাছ রক্ষা করতে 400 গ্রাম ডাইথেন এম-45 বা ডাইথেন জেড-78 ব্যবহার করতে হয়।

আরো পড়ুনঃ জুলাই মাসের সবজি চাষ ২০২৩ - জুলাই মাসে সবজি চাষ পদ্ধতি

অ্যানথ্রাকনোজঃ অ্যানথ্রাকনোজ রোগে আক্রান্ত হলে পাতা ঝলসে যায়। এর থেকে মুক্তি পেতে কার্বেনডাজিম @ 2 গ্রাম দিয়ে ১ কেজি বীজ শোধন করুন লাগানোর আগে। জমিতে এর উপদ্রব দেখা গেলে ম্যানকোজেব @2 গ্রাম বা কার্বেন্ডাজিম @ 3 গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন।

শুকনো রোগঃ এই রোগের ফলে শিকড় পচে যায়। তাই এই রোগ গাছের জন্য খুব ভয়ানক হতে পারে। গাছের শিকড় যদি পচে যায় তাহলে গাছ অকালে মারা যাবে। এই রোগ জমতে বা গাছে দেখা দিলে M-45@400gm, ১০০ লিটার পানিতে ভিজিয়ে দিতে হবে।

হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি - শেষ কথা

কুমড়া আমাদের খুব প্রিয় ও খুব পুষ্টিকর একটা সবজি। কিন্তু মিষ্টি কুমড়া চাষ কিভাবে করে আপনি জানেন। এর চাষ পদ্ধতি খুব সহজ। শুধু এর মাটি, বীজ রোপণ এবং গাছের একটু ভালোভাবে যত্ন নিলেই মিষ্টি কুমড়ার গাছ বড় হয় এবং ফল ধরে। আমাদের দেশে অনেকে এটা বাসা বাড়িতে চালার ওপর তুলে দিয়েও চাষ করে এবং ফলন ও ভালো হয়। আপনারা যদি আমাদের এই পোস্টটা ভালোভাবে পড়েন তাহলে আপনাদের কাছে হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি আরো  সহজ হয়ে যাবে। ২২৪৯৮ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url